আজকালের সংবাদের প্রকাশককে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ প্রকাশিত: ৯:১২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫ নিজস্ব প্রতিবেদক ::: আওয়ামী ট্যাগ দিয়ে ‘ দৈনিক আজকালের সংবাদ’ নামের একটি পত্রিকার প্রকাশক ও বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলমকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর পান্থপথ এলাকার মসজিদ থেকে এশার নামাজ পড়ে বের হবার সময় গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। দৈনিক আজকের সংবাদের প্রতিবেদক আল আমিন জানান, ‘ গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয় দিয়ে তাকে আটক করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। জুলাই আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে তিনি ও তার ছেলের ভূমিকা ইতিবাচক ছিলো। কলাবাগান ও তেজগাঁও থানায় যোগাযোগ করে আমরা কোন হদিস পাই নি। পরে জানতে পারি ডিবি পুলিশের মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার ( এডিসি) রফিউদ্দীন মোহাম্মদ যোবায়ের তাকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গেছেন। ‘ আল আমিন বলেন, ‘ তিনি আমাদের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন । এছাড়া তিনি বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস ওনার্স এসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি। সরাসরি রাজনীতির সাথে তার সম্পৃক্ততা ছিলো না। তার ছেলে আসিফ ইবনে আলম তিতাস জুলাই গণ অভ্যুত্থানের রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। এসব তথ্য প্রমাণ পুলিশকে দিতে গিয়ে জানতে পারি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা বাসায় চলে গেছেন। সম্পাদকের সাথে আমরা দেখা করতে গেলে দেখা করতে দেয়া হয় নি। ‘ এ বিষয়ে জানতে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার ( মতিঝিল জোন) রফিউদ্দিন যোবায়ের বলেন, ‘ খোরশেদ আলম আওয়ামী লীগের পদে না থাকলেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হয়েছিলেন । এছাড়া ক্রেস্ট গ্রহনসহ আওয়ামী লীগের কর্মসূচির ফেসবুক পোস্ট পেয়েছি। তিনি একসময় বাউফল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। এছাড়া সাবেক মন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের বেয়াই তিনি। ‘ তার বিরুদ্ধে কোন মামলা আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ সিটি এসবির রিপোর্ট আছে। তবে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কল্যাণ পরিষদের নেতা ছিলেন তিনি। ‘ ডিবি কার্যালয়ে স্বামীর খোঁজ নিতে আসা খোরশেদ আলমের স্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ‘ এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে সক্রিয় নন। ২০১৭ সালে ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হয়েছিলেন মাত্র। এছাড়া জাহাঙ্গীর কবির নানকের মেয়ের সাথে আমার ছেলে ছাড়াছাড়ি হয়েছে অন্তত পনের বছর আগে। নানক ও তার মেয়ে আমাদের পরিবারের উপর সরকারের পুরো মেয়াদে নানা নির্যাতন করেছে। বাসায় হামলার ঘটনাও ঘটিয়েছিলো। এসব কারণে আওয়ামী লীগের সাথে আমাদের মানসিক দুরত্ব আত্নীয় স্বজনসহ এলাকার মানুষ জানেন। ব্যবসায়ী হিসেবে স্বাক্ষাত করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে। সেই ছবিও আছে। ‘ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলাবাগান থানার পার্শ্ববর্তী বাড়িতে বসবাস করেন খোরশেদ আলম। তার দুই ছেলেই প্রবাসে থাকেন। বড় ছেলে তিতাস ( নানকের সাবেক মেয়ে জামাই) ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্রদের নির্বিচারে খুন -হত্যায় সংক্ষুব্ধ হয়ে দুবাই থেকে দেশে ফিরে রাজপথে ছাত্র জনতার সাথে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। জানতে চাইলে খোরশেদ আলমের বড় ছেলে আসিফ ইবনে আলম বলেন, ‘ আসলে কোন স্বার্থান্বেষী মহল শত্রুতামুলকভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হয়তো বিভ্রান্ত করেছে। আমার বাবা অসুস্থ মানুষ। রাজনীতিতে সক্রিয় নন বলেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন। নামাজ পড়তে গেছেন, ওখান থেকে দুর্ধর্ষ আসামীর মতো তুলে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। দেশে আসলে কি ঘটছে? জুলাই আগস্টের আন্দোলনে সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি আমি ও আমার পরিবার রাজপথে নেমেছিলো। আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগী হলে, আমার বাবা আওয়ামী লীগের নেতা হলে গত সরকারের আমলে আমার ভাইকে জেলে যেতে হতো না। এখন তো এসবের চেয়ে কেন ব্যবসায়ী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন সেটিই বড় করে দেখা হচ্ছে। ‘ আসিফ বলেন, ‘ আমি কিভাবে নির্যাতিত হয়েছিলাম, ২০১১ সাল থেকে কতোটা কস্ট সহ্য করেছিলাম ; সেটি বললে তো ইতিহাসের বই হয়ে যাবে। ‘ আসিফ ইবনে তিতাসের ফেসবুক পেজে ডুকে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্ন স্টাটাস, ছবি পোস্ট করার প্রমাণ মিলেছে। তিতাস ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই ফেসবুক স্টাটাসে লিখেছেন… ‘ STOP ATTACKING GENERAL STUDENTS BY OUTSIDER NON STUDENTS DON’T CROSS THE LIMIT, DO NOT BECOME VILLAINS TO PEOPLE BSL…’ পরদিন (১৬ জুলাই, ২০২৪ ) খোরশেদ আলমের ছেলে তিতাস লিখেছেন, ‘ আমি সালাম রফিক জব্বারদের দেখি নি। তবে আসিফ, রাফি, আদনান, সাইদ, ওযাসিমদের দেখেছি। ‘ ১৭ ই জুলাই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ রাস্ট্রের পুলিশ ভাইদের কাছে অনুরোধ আপনাদের বিবেক বিবেচনাকে কাজে লাগান। কাদের মারতে চান একটু ভাবেন। তারা আপনার ভাইয়ের মতো, বোনের মতো, ছেলের মতো, মেয়ের মতো। তারা এই দেশের সন্তান। আপনারা দয়া করে আক্রোশমুলক আক্রমণ করবেন না। ‘ জুলাই আগস্টের আন্দোলন চলাকালে প্রতিদিনই ছাত্রদের পক্ষে নিজের ফেসবুকে-রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন যিনি, তার বাবাকে আওয়ামী ট্যাগ লাগিয়ে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে- বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করলেন স্থানীয় দোকানদার সুমন। প্রতিবেদকের সাথে কথোপকথনে সুমন বলেন, যারা গত বছর গুলি করে মানুষ মারছে। সাধারণ ছাত্র জনতার উপর আক্রমণ করছে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ তাদের ধরতে পারে না। আর পুরোনো ছবি দেখাইয়া নিরীহ ব্যবসায়ী, সাংবাদিককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এটা কোন কথা? হাজার প্রাণের বিনিময়ে এমন বাংলাদেশ তো চাই নাই। ‘ খোরশেদ আলম ও আসিফ ইবনে আলম তিতাসকে দেড় যুগ ধরে চেনেন সাংবাদিক ওয়াহিদ জামান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ নানকের সাথে খোরশেদ আলমের পরিবারের আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে এক যুগ আগে। সেপারেশনের পরও নানকের মেয়ে, গুন্ডাপান্ডার নির্যাতনে অতিষ্ঠ ছিলো খোরশেদ আলমের পরিবার। তাদের বাড়িতে হামলা পর্যন্ত হয়েছিলো। আওয়ামী লীগ নেতার নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন খোরশেদ আলম ও তার ছেলে তিতাস। তিনি আওয়ামী লীগ পছন্দ করার কোন কারণ অবশিষ্ট থাকার কথা না। ‘ খোঁজ নিয়ে জানা যায় , বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন সমন্বয়ক আন্দোলন চলাকালে পান্থপথের সামুরাই গলিতে অবস্থিত খোরশেদ আলমের বাড়িতে (১১/সি) অবস্থান করার কথা স্বীকার করেছে। ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার দিন ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে চট্টগ্রাম থেকে গিয়ে তিন সমন্বয়ক খোরশেদ আলমের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তাদের একজন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহবায়ক রিদুয়ান সিদ্দিকী। জানতে চাইলে রিদুয়ান সিদ্দিকী বলেন, ‘ আমরা যেহেতু সেদিন খুব ভোরে ঢাকায় ডুকেছি। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসে পান্থপথের একটি বাড়িতে অবস্থান করেছিলাম। এক বড়ভাই আমাদের বিশ্রামের জন্য এই বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলেন। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে কলাবাগান থানার পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে উঠেছিলাম। বাড়ি মালিক খোরশেদ সাহেবের ছেলেও আমাদের আন্দোলনের সহযোদ্ধা। ‘ গোয়েন্দা পুলিশের তরফ থেকে দৈনিক আজকালের সংবাদের প্রকাশক ও বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলমকে কোন মামলা না থাকার পরও তুলে নেয়ার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয় নি। রাত তিনটা পর্যন্ত তাকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। প্রথম / তান/চট্র SHARES অপরাধ বিষয়: